শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৮ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নবী মুহাম্মদ (সা.): উত্তম চরিত্র ও মহানুভবতার একমাত্র আধার

মো. মিকাইল আহমেদ:

তিনি ছিলেন মানবজাতির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মহান উদার, বিনয়ী ও নম্র। তিনি ছিলেন সমাজসংস্কারক, ন্যায়বিচারক ও সাহসী যোদ্ধা। শুধুই কি তাই? ছিলেন তিনি দক্ষ প্রশাসক, যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক এবং সফল ধর্মপ্রচারকও। যাঁহার কোন তুলনা নেই কারো সাথে। কোন তুলনা হয়না। উত্তম চরিত্র ও মহানুভবতার একমাত্র আধার তিনি। সবার অকৃত্রিম শিক্ষণীয় আদর্শ ও প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তিনি। যাঁহার প্রেমে জগৎ মাতোয়ারা। সর্বগুণে গুণান্বিত তিনি। তিনিই আমার অাদর্শ, তিনিই আমার নেতা। তিনি আমার নবী, আমাদের নবী, সবার নবী। নবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যাঁহার আগমনে ধন্য এ ধরণী। পুষ্পিত, সুরোভিত, বিমোহিত চারিদিক। কবির ভাষায়,

যে নবীর আগমনে খুশি সৃষ্টিকূল, সে যে মোর প্রিয় নবী মোহাম্মদ রাসুল (সঃ) । [মোর প্রিয় নবী, জাবরুল ইসলাম চৌধুরী]

তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত। অন্ধকারে নিমজ্জিত জগৎবাসীর জন্য হিদায়াতস্বরুপ। তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্ব মনে কেড়ে নিয়েছে সবার। যাঁহাকে একনজর দেখার জন্য ব্যাকুল সমগ্র মুমিনের অশান্ত হৃদয়। কবি নজরুল উচ্চারণ করেছিলেন-

বিরহের রাত একেলা কেঁদে হলো ভোর;

হৃদয়ে মোর শান্তি নাই, কাঁদে পরাণ মোর॥

হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।

নবীর প্রেমে পাগল হইয়া আল্লামা শেখ সাদী আবদুল্লাহ’র কন্ঠে বেজেছিলো,

তাপিত প্রাণ শীতল হইতো গো নবী,

দেখতাম পরাণ ভরে;

নবী গো, একদিন দেখা দিবেন কি আমারে।।

তাঁর নিষ্কলুষ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আল-আহজাব, আয়াত: ২১) কবি জাবরুল ইসলাম চৌধুরী অারও লিখেন, ‘যে নবীর আদর্শতে জাহেলিয়াত হলো দূর, কালো দিনের অবসানে কোরআনের ঐ নূর ।’ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আজকে সেই নবীর শানে বেয়াদবী করছে কিছু মানুষ। কষ্টে কলিজাটা মোদের ফেঁটে যায়। ক্ষমা করো হে নবী। কবি নজরুল ইসলাম আরও গেয়েছিলেন-

দুখের দোসর কেউ নাহি মোর নাই ব্যথিত ব্যথার,

তোমায় ভুলে ভাসি অকূলে, পার করো সরকার॥

হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।।

তিনি বর্বর আরব জাতির আস্থাভাজন হতে সক্ষম হয়েছিলেন অবিস্মরণীয় ক্ষমা, মহানুভবতা, সত্যনিষ্ঠতা, বিনয়-নম্রতা প্রভৃতি বিরল চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে । যে কারণে তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বস্ত উপাধিতে ভূষিত করেছিল তারা। তারা একবাক্যে অকপটে স্বীকার করেছে তিনি যে বিনয়-নম্র ও সৎচরিত্রের অধিকারী ছিলেন তা। দুনিয়ার মানুষকে অর্থের দ্বারা নয় উত্তম ব্যবহার, প্রেম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে জয় করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সূরা আল-কালাম, আয়াত: ৪)

তিনি মানুষকে কখনো তুচ্ছজ্ঞান ও হেয়প্রতিপন্ন করেননি। আত্মমর্যাদাবোধবশত তিনি কাউকে কখনো নগণ্য ভাবেননি। পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠতর স্বভাব-চরিত্রের অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করে। বিনয় ও নম্রতা ছিল সদা জাগ্রত তাঁর স্বভাব-চরিত্রের মধ্যে। বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল তাঁকে সর্বোত্তম আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবেই। অার এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন নিরহংকারী, আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। কখনো কোন দুর্বল ব্যক্তিকে কটু কথার মাধ্যমে আঘাত করতেন না। কোনো মানুষকে তার সামর্থ্যের বাইরে অসাধ্য কাজে বাধ্য করতেন না। তিনি ওঠাবসা করতেন দরিদ্র অসহায় মানুষের সঙ্গে। নম্রতাসুলভ আচরণ প্রদর্শন করার জন্য তিনি সাহাবায়ে কিরামদের উপদেশ দিতেন। আচার-ব্যবহারে অযথা রাগ ও ক্রোধ থেকে সর্বদা বিরত থাকার পরামর্শ দিতেন এবং তিনি মানুষকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নম্র-বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চাসনে আসীন করেন আর যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে অপদস্থ করেন।’ (মিশকাত)

বিধর্মীরাও আশাতীত সুন্দর কোমল আচরণ লাভ করত তাঁর কাছ থেকে। পবিত্র সংস্রব কিংবা সামান্যতম সুদৃষ্টির কারণেও অনুসারীরা তাঁকে প্রাণাধিক ভালোবাসত। তাঁর অনুসারীরা মনে-প্রাণে গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করত কারণ তিনি এতই নমনীয় ও কোমলতর ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) তাঁর কোমল ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, ‘নবী করিম (সা.) কঠোর ভাষী ছিলেন না, এমনকি প্রয়োজনেও তিনি কঠোর ভাষা প্রয়োগ করতেন না।

লেখক: মো: মিকাইল আহমদ

ভয়েস/আআ

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION